মেয়েদের ভাষা- ক্যাংলাস পার্টির মুখে প্রতিমুহূর্তে জন্ম নিচ্ছে ফ্যান্টামাটুম ভাষা

তৃষ্ণা বসাক
‘The women had another language than the man’
-রচফোর্ড
পেট ভরানো নিয়ে কথা, নুন ভাত খেলেই হয়, কিংবা সব সব্জি ভাতের মধ্যে সেদ্ধ দিলেই পুষ্টিগুণ থাকে, কিন্তু রান্না মানে কি শুধুই পেটের তুষ্টি আর শরীরের পুষ্টি? না তার অধিক কিছু? তাই তো মেয়েরা থালায় সাজিয়ে দিল পঞ্চ ব্যঞ্জনের ব্যঞ্জনা।
রাতে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই বৈ তো নয়, তবু তার চৌকাঠে আলপনা আঁকল, কুলুঙ্গি থেকে চালের জালা সবখানেই রেখে দিল একটু শিল্পের ছোঁয়া, খাবার বা অন্য জিনিস ঝোলানোর শিকে, সেগুলো করে তুলল দৃষ্টিনন্দন। লোককুটুম এলে যে আসন বিছানো বা পিঁড়ি পেতে দেওয়ার চল, তা এক একটি শিল্প সামগ্রী হয়ে উঠল।
শরীর পরিষ্কার করে রাখলেই হয়, মেয়েরা তার বেশি কিছু করল। নাকে কানে গলায় হাতে, এমনকি কোমরে, ওপর বাহুতে, দামি ধাতু না জুটল, না-ই জুটল, ফুল দিয়েই বানিয়ে ফেলল গহনা। অলংকার। যার মধ্যে আছে অলম শব্দ, যার একটি অর্থ ভূষণ।
অর্থাৎ মেয়েরা যা করে, তাতে প্রয়োজনের বেশি দেয়। ভ্যালু অ্যাডিশন। আর মেয়েদের ভাষাতেও সেই একই ব্যাপার।তা শুধু ভাব প্রকাশের মাধ্যম নয়, তা সৌন্দর্য তৈরি করে।মেয়েরা যখন কথা বলে তখন তাদের চোখ মুখ শরীর কথা বলে, সে ভাষা যত শোনার ততটাই দেখার।
মেয়েদের কথা বলাটাই কত জীবন্ত অ্যানিমেটেড হতে পারে, তার একটা চমৎকার ছবি এঁকেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘অরন্ধনের নিমন্ত্রণ’ গল্পে। ‘… আমতলায় দাঁড়িয়ে মেয়েটি হাত পা নেড়ে একটা গল্প জুড়ে দিলে-কাল দুপুরে নাপিতবাড়িতে ছাগল ঢুকে নাপিত বৌ কাঁথা পেতেছিল, সে কাঁথা চিবিয়ে খেয়েছে, এইমাত্র ঘটনাংশ গল্পের। কিন্তু কি সে বলবার ভঙ্গি, কি সে কৌতুকপূর্ণ কলহাসির উচ্ছ্বাস, কি সে হাত পা নাড়ার ভঙ্গি, পিসিমার চায়ের জল গরম হল, চা ভিজান হল, হালুয়া তৈরি হল, পেয়ালায় ঢালা হল-তবুও সে গল্পের বিরাম নেই’
য়সপারসন-র ‘Language, its Nature development and origin’
(1922) – ‘The women’ অধ্যায়ে আছে’ with the zulus a wife is not allowed to men-
tion the name of her father in-law and of his brothers, and if a similar word on
even a similar syllable occurs in the ordinary language, she must substitute some-
thing else of a similar meaning’ 1 ‘The fact that a wife
is not allowed to mention the name of her husband makes one think that we have
here simply an instance of a custom found in various fr oms called verbal tabu’
মেয়েদের জন্য কিছু শব্দ শুধু না, নিষিদ্ধ ছিল রাজদরবারের বা উপার্জনের ভাষাও।
সংস্কৃত নাটকে শূদ্র ও নারী-র জন্য সংস্কৃত নয়, নির্দিষ্ট ছিল প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষা।
অনেক পরিবারেই ছেলেদের ইংরেজি কাগজ আসলেও মেয়েদের জন্য একখানা বাংলা কাগজ রাখতে হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বহুদিন মেয়েদের ইংরেজি শিখতে দেওয়া হয়নি ইংরেজি শিখলে মেয়েরা বিধবা হবে এই অজুহাতে।
এই যে কিছু শব্দ ঠোটে আনাই নিষেধ, সেই অবরোধকে ভেঙে দেয় মেয়েরা বিকল্প শব্দ তৈরি করে। কারো শ্বশুরের নাম পটল হলে মেয়েরাই পটল দিয়ে মাছের ঝোলকে বলতে পারে ‘শ্বশুর দিয়ে মাছের ঝোল’। এই কৌতুক করার ক্ষমতা আসলে এক তীব্র প্রতিবাদ।
স্ত্রীধর্মনীতি বনাম হৃদয়ের কথা
বুঝতে নারি নারী কী চায়
মাঝখানে ছেদ কইতে কথা
কইতে কইতে মুদে পাতা
হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলে
আসতে কাছে ফিরে যায়
মেয়েরা যে কী চায়! ভারি গোলমেলে বিষয় তা। শেক্সপিয়র থেকে সতু পাঁড়ে সবারই মেয়েদের নিয়ে ভারি মুশকিল। মেয়েদের ভাষা কেউ বোঝে না। তাই ‘বিরিঞ্চিবাবা’-র মতো বুঁচিদের সব কথাই উল্টো ভেবে নেওয়াই দস্তুর। না মানেই হ্যাঁ। তাদের নাকি বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না।
যা ভাবে তার উল্টোটাই বলে।
‘চার অধ্যায়’-এ আছে-
‘মেয়েদের হাজার বছরের হাতকড়ি –লাগানো মন, তারা মানবে, প্রশ্ন করবে না-এইটেতেই সমাজ-মনিবের কাছে বকশিশ পেয়েছে, সেইজন্যে মানাটা যত অন্ধ হয় তার দাম তাদের কাছে বড় হয়ে ওঠে’
আর এলার মতো মেয়েরা কথা বলতে পেরেছে নিজের হৃদয়ের ভাষায়, কারণ তারা মনের হাতকড়ি ভেঙে এগোচ্ছে।
‘মেয়ে যখন অপরাধ অস্বীকার করত, ফস করে বলতেন , মিথ্যে কথা বলছিস। অথচ অবিমিশ্র সত্যকথা বলা মেয়ের একটা ব্যসন বললেই হয়। এজন্যেই সে শাস্তি পেয়েছে সব চেয়ে বেশি। সকল রকম অবিচারের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা তার স্বভাবে প্রবল হয়ে উঠেছে। তার মার কাছে মনে হয়েছে এইটেই স্ত্রীধর্মনীতির বিরুদ্ধে’
মেয়েদের কতটা আবেগ লুকোতে হয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, তার উদাহরণ চরিত্রহীনের এই অংশটি।
‘আজ আমার জন্মদিন তাই, নিজে এসে যখন দাসীর ঘরে পায়ের ধুলো দিয়েছেন, তখন শুধু শুধু আপনাকে ছেড়ে দিতে পারিনে’ পারিনে বলিয়াই সাবিত্রী হঠাৎ থামিয়া গেল বটে, কিন্তু তাহার অন্তরের গোপন ব্যথাটা তাহারি কণ্ঠস্বরের মুক্ত পথ ধরিয়া এমনি অকস্মাৎ সতীশের সুমুখে আসিয়া দাঁড়াইল যে কয়েক মুহূর্তের জন্যে সতীশের সমস্ত বোধশক্তি অসাড় হইয়া গেল।‘ (চরিত্রহীন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
কিংবা একই লেখকের অন্য একটি উপন্যাস দেখা যাক-
‘তাহার মুখে হাসির আভাস লাগিয়াই রহিল, কিন্তু গলার শব্দ বদলাইয়া গেল। ওষ্ঠ প্রান্তে ও কণ্ঠস্বরে সহসা যেন আর সংগতি রহিল না। (দেনা-পাওনা)
একবার রবীন্দ্রনাথ আছেন মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়ি। সেখানে রবীন্রনাথের শখ হয়েছে ছাতুমাখা খাওয়া হবে। ভালো না লাগা সত্ত্বেও মৈত্রেয়ী দেবী বললেন ‘খুব চমৎকার’ আর মৈত্রেয়ী দেবীর মাসী সুব্রতা দেবী বললেন ‘নির্ভয়ে কব? এতই কী ভালো’
রবীন্দ্রনাথ বললেন ‘দেখো তোমার ভাগ্নীর ঠিক তাই মত, কিন্তু স্ত্রী সুলভ চাতুরী বশত সামলে নিলেন। স্পষ্ট দেখলুম, মুখে দিতেই মুখটা কেমন হয়ে গেল, একেবারে তখুনি তখুনি বলে উঠলেন-খুব চমৎকার, যত খারাপ লাগছে তত বলে আরও খাওয়া যাক’
পরের দিন মাসী জোর করে বললেন খুব ভালো হয়েছে। কবি তখন বললেন ‘মাতৃস্বসা, কাল যে কাজটা করেছিলে সেটা স্বজাতির বিরুদ্ধতা, আজকেরটাই ঠিক, এ সব বিষয়ে সত্যমিথ্যার মূল্য সমান, দুঃখ দিতে চাও না, এটাই অমূল্য’
অর্থাৎ মেয়েরা কী ভাষা ব্যবহার করবে, কতটা সত্য বলবে, কতটা মন রেখে, তা নিয়ে সমাজের একটা নর্ম বাঁধাই আছে। রবীন্দ্রনাথ তার বাইরে নন।
আশাপূর্ণা দেবীর ‘অভিনেত্রী বলে একটি গল্পে আছে, সংসারের শান্তির জন্যে ছেলে মেয়ে স্বামীর কাছে বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বাড়ির গিন্নি। এখানেও সেই প্রিয়জনের মন রাখার দায়, মন জুগিয়ে চলা, যার তাগিদ অর্থনৈতিক ভাবে বলীয়ান ও শক্তিমান পুরুষ অত অনুভব করেন না।
চুল আর চোখের সংকেতে মেধাবিনী
̊Women’s Dialect in
Bengali’ গ্রন্থে সুকুমার সেন বলেছেন-
‘Women’s vocabulary contains a very large number of intensive words and emphatic particles as well as per jorative expletives’
‘The superior rediness off speech of women is a concomitant of the fact
that their vocabulary is smaller and more central than that of man. But
this again is connected with another indutitable fact, that woman do not
reach the same extreme points as men, but are nearer the average in
most respects
শুধু উচ্ছাস, ঝঙ্কার, নয়, বডি ল্যাঙ্গয়েজ, জেসচার, ইঙ্গিত ইশারায় অনেক কাজ চালায় মেয়েরা।
‘বধূ মুহূর্তমাত্র দাঁড়াইয়া সতীশের দিকে বিদ্যুদ্দাম কটাক্ষ করিয়া বাহির হইয়া গেল, যেন স্পষ্ট শাসাইয়া গেল , তোমরা কাজটা ভাল করিতেছ না’ (চরিত্রহীন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
বাড়ির কর্তার কাছে কোন কথা পাড়া বা কিছু আদায় করার সময়ও মেয়েদের ভাষা বদলে যায়। মনে পড়বে দেবী চৌধুরানীতে প্রফুল্লকে বৌ হিসেবে স্বীকৃতি দেবার আবদার করতে ব্রজেশ্বরের বাবার কাছে মার সেই দরবার, যার মধ্যে নথ নাড়ার ব্যঞ্জনাটিও ছিল।
‘হাতের বাউটির খিল খুঁটিতে খুঁটিতে’ কথা পাড়া, তারপর আসল কথায় আসা ‘একটু একটু নথ ও বাউটি নাড়া দিয়া- কেননা বয়স এখনো পঁইয়তাল্লিশ বৎসর মাত্র…’
অর্থাৎ মেয়েদের ভাষার মধ্যে এগুলোও ঢুকে গেল।
পরে সিনেমায় মেয়েদের এই শরীরী ভাষা খুব ভালো করে এক্সপ্লয়েট করা হল। নারীর ব্রীড়া বোঝাতে হাতে আঁচল পাকানো কিংবা পায়ের আঙুল দিয়ে মাটি খোড়া বহুল ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে গেল।
অবরুদ্ধ কলম
লেখিকাদের জন্য শুধু উপেক্ষা নয়, অবরোধও। তবু মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও স্তব্ধ হয়নি মুঘল রাজকুমারী জাহানারার লেখনী।
‘বগায়ের সবজ না পোশদ কসে মজারে মরা
কে করব-পোষে গরিবাঁ হামিন গিয়া বস অস্ত।’
‘তৃণগুচ্ছ ছাড়া আমার সমাধির ওপর কোন আস্তরণ করো না।
এই তৃণগুচ্ছই অবনমিতার সমাধির আস্তরণ হোক।’
(১৬৮০ খৃঃ জুলাই)
জাহানারার দুই বাধা ছিল। এক তো মুঘল রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা, দুই- তিনি নারী। কিন্তু ইসলামে আত্মজীবনী লেখার পরম্পরা আছে। তা ছিল বলেই আমরা পেলাম ইতিহাসের এক প্রামাণ্য দলিল। ‘আমি আগ্রার দুর্গে এক বিস্তৃত প্রকোষ্ঠে মৃদু আলোকশিখার পাশে বসে কম্পিত হস্তে লিখছি আমার এই আত্মকাহিনি, …এই নির্জন রাত্রিতে আমি আমার দুঃখের সঙ্গীত বিস্মৃতিকে দিয়ে যাব, আর বিস্মৃতির কাছে গচ্ছিত রেখে যাব আমার জীবনের দুঃখ আর গাথা’
আত্মকাহিনির শেষ দিকে পিতা শাহজাহানের মৃত্যুর পর তিনি হয়ে উঠেছেন ভয়হীন।
‘…না,না, কেন নষ্ট করব? এই আত্মজীবনী আমার রুদ্ধকারার দিনগুলির সখা। এ যে আমার বুকের রক্ত দিয়ে লেখা…এর প্রত্যেকটি শব্দ যে আমার অন্তরের প্রতিধ্বনি, আমি আজ সম্রাট বাবরের কথাগুলি স্মরণ করছি। ‘আমার আপন আত্মার মতো বিশবস্ত কোন বন্ধু আমি পাইনি। আমার নিজ অন্তর ব্যতীত আমি কোন নির্ভরযোগ্য স্থান পাইনি’ …সুদূর ভবিষ্যতে কোন একদিন আমার এই আত্মজীবনী (পড়ে) মানুষ জানবে- সম্রাট শাহজাহানের কন্যার মতো দীনা রিক্তা আর কেহই ছিল না’
এই আত্মজীবনীর কিছুটা তিনি নষ্ট করেছিলেন নিজের হাতে, পরে মত পরিবর্তন করে সব অংশ একত্র করে জেসমিন প্রাসাদের শিলাতলে গচ্ছিত রাখেন।
মেয়ে – গজালি
মেয়েদের সবচে অন্তরঙ্গ ভাষার সন্ধান পাওয়া যায় বুঝি পুকুরঘাটে। সেই যে ‘ঘাটের কথা-র কুসুম, তার সঙ্গিনীরা কেহ তাহাকে বলিত কুসি, কেহ তাহাকে বলিত খুশি, কেহ তাহাকে বলিত রাক্কুসি। উইলিয়াম কেরী-র কথোপকথনে মাইয়া কোন্দল এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত মূলক।
পুকুরঘাটে যেমন, তেমনই মজুমদার বাড়িতে ভাঙ্গা রোয়াকে ছিল দুপুরের মেয়ে গজালি। সেখানে ষোল সতেরো বছরের শান্তি তার মায়ের বয়সী মহিলার নামে অবলীলায় বলতে পারে ‘ঢের ঢের মেয়েমানুষ দেখেছি, অমন লংকাপড়া ব্যপক যদি কোথাও দেখে থাকি, ক্ষুরে নমস্কার, বাবা বাবা’
ছোট মেয়ের ওই জ্যাঠামি কথার জন্যে তাকে কেউ বকলেও না বা শাসন করলে না।বরং কথাটা সবাই উপভোগ করলে। (কিন্নর দল, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)
ফ্যান্টামাটুম ভাষা
তবে এই যে ছেলেদের আর মেয়েদের ভাষার ফারাক, এ অনেকটাই সেই সময়ের, যখন মেয়েরা পশ্চিমী শিক্ষাব্যবস্থার কলে তৈরি হয়নি ছেলেদের মতো। তাদের শিক্ষা দীক্ষা অনেকটাই আলাদা ছিল। আর এই সময়ে দাঁড়িয়ে মেয়েরা অবলীলায় ছেলেদের মতো দুই অক্ষর চার অক্ষর ব্যবহার করে। মুদ্রণ, বৈদ্যুতিন এবং অধুনা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব পড়েছে তার ভাষায়।
চোখের বালির বিনোদিনীর কথাকে বিহারীর মনে হয়েছিল ছাপাখানার প্রতিধবনি। এখন সবজায়গায় ছেলেদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়তে লড়তে কি মেয়েরা ভাষার নিজস্বতাও হারিয়ে ফেলছে? তাদের কথা হয়ে উঠছে ইলেক্ট্রনিক আর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিধবনি? মেয়েদের ভাষা হারিয়ে ফেলছে তার ঝঙ্কার, মাধুর্য? নতুন শব্দ তৈরির ক্ষমতা হারিয়ে ভীষণ একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে?
বোধহয় না, ভাষার জীবন্ত রূপ ধরে রেখেছে সমাজের সেইসব প্রান্তিক, আন্ডারপ্রিভিলেজড মেয়েরা, যারা আমার আপনার ঘরে কাজ করে, বাজারে সব্জি নিয়ে বসে, লেডিজ কামরা বোঝাই করে ফেরে বনগাঁ বা ক্যানিং, ফুল আনতে ভোর রাত্তিরে ছোটে জগন্নাথ ঘাটে। তাদের কথায় কান পাতলে বোঝা যায় বাংলা ভাষা কত সুন্দর আর জীবন্ত। এই শুনছ, ওগো, হ্যাঁগো, প্রবাদ প্রবচন ছড়া, শব্দ ভাণ্ডার কম তো কুছ পরোয়া নেই, তাদের আছে নতুন শব্দ তৈরি করার ক্ষমতা। যেমন প্লাস্টিক পলিথিন ব্যাগ- চিকচিকে, বাইরের লক-আউট লোক। দারুণ কোন ঘটনা বা দেখতে-ফ্যান্টামাটুম, শোলোক বলা, গান বলা।ইস্টাইলের বঁটির বাঁট।
আমার ছোট্ট মেয়েকে দেখাশোনা করত দীপা বলে একটি মেয়ে, সে কথায় কথায় ছড়া কাটত
‘একতলা দোতলা তিনতলা
পুলিশ গেল নিমতলা
পুলিশের হাতে মোটা লাঠি
ভয় করে না ক্যাংলাসপার্টি’
এই ভয় এবং ভনিতাহীন ক্যাংলাস মেয়েদের মুখেই প্রতিমুহূর্তে জন্ম নিচ্ছে ফ্যান্টামাটুম ভাষা।
মনে রাখার মত লেখা।মেযেলি ভাষার দিক নির্দেশ করে এই লেখা।
অপুর্ব লেখা। আস্তে, আস্ত সব পড়ব।
এইবারের সংখ্যা যত পড়ছি তত আনন্দিত, চমৎকৃত হচ্ছি। অসাধারণ।
Fantamatum lekha!!!
অনেকদিন পর মস্তিষ্ক রসে সিক্ত অনবদ্য বাংলা ভাষ্য পাঠের সৌভাগ্য হল।
অসাধারণ একটি লেখা।
পড়তে পড়তে মনে হলো, সত্যিই তো, এমনটিই হয়।
কত গল্প, কত জানা অজানা তথ্য, ভাষার রসায়নের কৌশলে মোড়া এই লেখা। তেমন দৃঢ় অথচ সোনার কলম। ঋদ্ধ হলাম। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ দিদি আপনাকে।
খুব ভালো লাগলো। সত্যি ই তো শেক্সপিয়ার থেকে রবীন্দ্রনাথ, মেয়েদের ভাবনা নিয়ে বড় ই বিড়ম্বিত।
সত্যিই দারুন ভাবনা…মেয়েলি ভাষা৷ এইভাবেও ভাবা যে যায়…খুব ভালো লাগলো৷ একদম” ইস্টাইলের বটির বাঁট”
অসাধারণ লেখা। মেধাদীপ্ত, বিশ্লেষণী লেখনী।