বিলেতে দেহাতি/ অষ্টম পর্ব

সুজাতা রায়
Switzerland এ আমাদের হোটেল NOVOTEL। কিন্তু RTPCR টেস্টের পর আমরা প্রথমে ডিনার সেরে হোটেলে ঢুকবো। সেই মতো ‘ইন্ডিয়া গেট’ হোটেলে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো। নিরিবিলি নির্জন একটা পাড়ার মধ্যে এই হোটেল। ভেতরে ঢুকতেই মনে হবে উত্তর ভারতের কোনও শহরে আছি। বস্তুত এই ট্যুর কোম্পানি গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাই এই সব হোটেলেই নিয়ে যায় সে আপনি যাদের সঙ্গেই যান না কেন। মেনুও মোটামুটি গতে বাঁধা। শুধু গুজরাটি মালিক হলে ডেজার্ট-এ শ্রীখন্ড দেবে। উত্তর প্রদেশী বা পাঞ্জাবি মালিক হলে হালুয়া বা গুলাবজামুন আর বাঙলাদেশী হলে পায়েস। বৈচিত্র্য বলতে এই। সব জায়গাতেই বুফে সিস্টেম। যে যার খাবার নিয়ে বসে খাচ্ছি। জুরিখে দই (টক)মুখে দিয়ে মোহিত আমি। এমন অপূর্ব দই আমি জীবনে প্রথম খেলাম। রায়বাবুকে দইয়ের কথা বলতে গিয়ে দেখি তিনি দই নেন নি। সারাদিনের ধকলের পর সবে খাওয়া শুরু করেছে মানুষটা আবার উঠে দই আনতে যাবে! বৌ এর মন মায়ায় গলে গেল ‘বসো বসো, আমি এনে দিচ্ছি’! নিজের জন্য আরও একবাটি নিয়ে দুহাতে দু বাটি দই নিয়ে আসতে আসতে ‘কোথা থেকে কি হইয়া গেল’আমি হুমড়ি খেয়ে একদম কুমীরের মতো দুহাত দুপা ছেতরে মাটিতে, একচুলের জন্য টেবলের কোনা থেকে চোখ বেঁচে গেল। চশমা কোথায় ছিটকে পড়লো। একবাটি দই টেবলের নীচ দিয়ে উল্টোদিকে রায়বাবুর গোটা প্যান্টে (প্যান্টের রঙ কালো) আর এক বাটি দই আমার থুতনি গলা বুক হয়ে নিম্নগামী। চারিদিক থেকে সবাই ছুটে এসে আমায় যখন তুললো তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার সম্পূর্ণ ব্ল্যাক আউট হয়ে গেলো। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে আবিষ্কার করলাম আমাকে তুলে বসানো হয়েছে। ডান হাটুর টিবিয়া বছর পাঁচেক আগে ভেঙে আমি চারমাস বিছানায় ছিলাম। ঠিক সেখানেই যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। অসহ্য খিদে, সারাদিনের একটানা জার্ণি, হাঁটুর যন্ত্রণা। বিদেশ বিভুঁইয়ে পা ভাঙার ভয় সব মিলিয়ে এই বয়সে আমি হুহু করে কেঁদে ফেললাম। চৈতী,বেয়ান দুজনে মিলে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে আমায় সাফসুতরো করে আনলো। নীরেনদা সঙ্গে ওষুধ নিয়েই ঘুরছিলো। প্যারাসিটামল সাড়ে ছশো দিয়ে যন্ত্রণা কমানোর চেষ্টা শুরু হলো। হাতিবাগানের সাহা গিন্নি ছুটে এলেন আর্ণিকা নিয়ে। বেয়ানের ব্যাগ থেকে ভোলিনি। মারাঠি মহিলা রুমার অয়েল। কর্তা দিশেহারা! হোটেলের মালিক, স্টাফ সব্বার ছুটোছুটির মধ্যে দেখলাম রীতেশ একটা বাটিতে দুটো গরম গুলাবজামুন নিয়ে এসে আমার সামনে রেখে বললো ‘এ দুটো খাও, সব ঠিক হয়ে যাবে’! (যেন সুগারের রোগী মিষ্টির লোভে কান্না জুড়েছি!) আমাকে নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে কেউ কর্তার প্যান্টের দিকে খেয়াল করে নি। থাই থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত দইয়ে মাখামাখি। এ অবস্হায় গাড়ি করে হোটেলে যাবে কি করে? এমন আঠালো দই টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে কুল পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত জল দিয়ে ধুয়ে সুইৎজারল্যান্ডের ঐ ঠান্ডায় ভিজে প্যান্ট পরে রওনা দিতে হলো। নেহাত নিচে থার্মাল ছিলো। ছোটবেলায় দেখতাম মিষ্টিরদোকানে লেখা থাকতো ‘হিমশীতল দধি’ বুড়োবেলায় খেয়ে মেখে ছড়িয়ে টের পেলাম হিমশীতল আর দধি একজায়গায় হলে কি হয়!
এতো ক্লান্তির পরেও সারারাত ঘুম নেই, ওষুধের ফলে যন্ত্রণা নেই কিন্তু টেনশন এ পাগলপারা দশা। বারবার দেখছি পা ফুলেছে নাকি। পরদিন সকালেই আমাদের উংফ্রাও(JUNGFRAUJOCH) যাওয়ার কথা।এই ট্যুরে উংফ্রাওটা ছিল অপশনাল। হয় জুরিখ ঘোরো নাহলে উংফ্রাও যাও।ইন্টারলেকেন হয়ে উংফ্রাও যেতে হলে আলাদা একশো তিরিশ(এগারো হাজার সাতশো টাকা)ইউরো দিতে হবে মাথাপিছু। আমরা যাবো বলে সে টাকা আগেই দিয়ে রেখেছি। জুরিখ তো যেতে আসতে দেখাই হবে কিন্তু উংফ্রাও কি আর আসবো কোনও দিন।উঙফ্রাও হলো টপ অফ ইওরোপ,উচ্চতা এগারো হাজার সাতশো বিরাশি ফিট/তিন হাজার পাঁচশো একাত্তর মিটার। কি হবে কি হবে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছে। ভোরে ঘুম ভাঙতেই ধরমড়িয়ে উঠে দেখি নাহ্! পা ফোলেন। খাট থেকে নেমে দু পা হাটতেই দেখি ব্যথা ফিরে এসেছে, তবে তেমন মারাত্মক না। ওষুধ তো আছেই। হঠাৎ দেখি ভারি লেপের আড়াল থেকে একজোড়া চোখ আমায় হাঁটতে দেখে নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে শুলো। কেন না হাঁটছি যখন ইলেকট্রিক কেটলে চা টাও বসাতে পারবো। শুধু শুধু বেডটি টা কেন ফস্কাবেন?
গতকাল তালেগোলে হোটেলের দিকে খেয়াল করি নি। আজ ব্রেকফাস্ট করতে নেমে প্রথমেই নজর গেল নধরকান্তি বিশালকায় এক গোমাতা এই পাঁচতারা হোটেলের রিসেপশন আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন।কাচের শোকেসে রাশিরাশি দুধেল বাটওয়ালা গরু। কাঠের গরু, পাথরের গরু, মাটির গরু, প্লাস্টার অব প্যারিসের গরু, মার্বেল ডাস্টের গরু আরো কতরকমের গরু! তন্ন তন্ন করে খুঁজেও একটা ষাঁড়ের দেখা পেলাম না। এমন নারীবাদী হোটেল দেকিনি বাপু! খাবার ঘরে ঢুকে দিশেহারা। এঘর থেকে ওঘর হয়ে সেঘর জুড়ে খাবার। প্রথমে একগ্লাস কফি নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলাম চেনা জানা নিরামিষ পদ কি কি আছে। খাবার ঘরে ঢুকেই আমি দূর থেকে সম্বুদ্ধ মৌলিকে (সত্যি নাম)র দিকে নজর রাখি। উনি যা যা নেন আমি সেগুলোর আশেপাশের জিনিসেও হাত দিই না। প্যারিসের হোটেলে উনি হাঙর/ঘোড়া সব খেয়েছেন। এখানেও ওঁকে খুঁজে বের করলাম। যে ঘরে উনি খাবার নিচ্ছিলেন পরবর্তী ক’দিন আমি আর সে ঘরেই ঢুকিনি। অত্যন্ত সুসজ্জিত ডাইনিং হলের দেওয়াল জুড়ে সব বিখ্যাত মানুষ জনের হাস্যময় মুখের ছবি।তবে তাঁরা কে, কেন বিখ্যাত সে সব জানি না।আসলে তেমন তেমন মানুষ না হলে কি আর ছবি ঝুলিয়ে রাখতো। তারমধ্যে একটি মেয়ের উড়ন্ত চুল আর সরল অনাবিল হাসির মাধুর্যে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। রোজ খাবার নিয়ে ঐ ছবির সামনের টেবলটায় বসতে শুরু করলাম।
দলের অর্ধেকের মতো লোক নিয়ে আমাদের উঙফ্রাও ভ্রমণ শুরু হলো। উচ্চতার কারণে বেশিরভাগই যায়নি। নর্দার্ন সুইজারল্যান্ডে লেক জুরিখের উত্তরদিকে লিমট নদীর পাড়ে অবস্থিত ঝাঁ চকচকে জুরিখ হলো financial capital of Switzerland। ব্যাঙ্কিং আর ফিনান্সের পীঠস্থান এই শহরটির জনসংখ্যা চার দশমিক তিন লক্ষের মতো। ইওরোপের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর হলো জুরিখ।আমাদের ধনকুবের আর নেতামন্ত্রীদের হাজার হাজার কোটি টাকার অন্যতম গন্তব্য যে সুইস ব্যাঙ্ক সে সব এই জুরিখেই। উঙফ্রাও যাবার পথে বাসের জানলা দিয়ে জুরিখ দেখতে দেখতে রওনা দিলাম ইন্টারলেকেন-এর পথে। কী অসম্ভব পরিষ্কার তকতকে একটা শহর। ছবির মতো বাড়িঘর। পুতুলের মতো মানুষ জন। নীল টলটলে জলের লেক জুরিখ। যেন সত্যি নয়, রূপকথার দেশ। আস্তে আস্তে শহর ছেড়ে পাহাড়ের পথ ধরলাম। আদিগন্ত সবুজ শস্যক্ষেত আর লাল হলুদ কমলা পাতায় সেজে পথের দুধারে বসন্ত উৎসবে মেতেছে গাছের দল। ডানদিকে তাকালে বাঁ দিক ফস্কে যাচ্ছে, বাঁদিক দেখলে ডানদিক। ইন্টার লেকেনে পৌঁছে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। একি সত্যি না স্বপ্ন! চারিদিকে পাহাড় ঘেরা এক স্বর্গসম গাঁয়ের নাম ইন্টার লেকেন। সবুজ ভেলভেটে মোড়া মাঠ লুটোপুটি খাচ্ছে পাহাড়ের পায়ে। একটু দূরে দূরেই রাস্তার ধারে র্যাডো রোলেক্স আরো কতো ব্রান্ডের এর সুসজ্জিত দোকান। থরে থরে সাজানো বহুমূল্য ঘড়ি, হীরের গয়না, গৃহসজ্জার অজস্র সম্ভার। কিন্তু আশ্চর্য রাস্তায় একটিও মানুষের দেখা নেই। যেন সোনার কাঠির ছোঁয়ায় গ্রামটা ঘুমিয়ে গেছে। একটা ফুলের দোকান দেখিয়ে রীতেশ বললো এখানেই ডি.ডি.এল.জি-এর শ্যুটিং হয়েছিল। সংলগ্ন পার্কে যশ চোপড়ার পূর্ণাঙ্গ মূর্তি সাজানো।
মুর্তিমান যশ চোপড়া
আমরা গুটি গুটি পায়ে সেই পাহাড় ছোঁয়া মাঠের ধারে গিয়ে দাঁড়ালাম। এত নিঃস্তব্ধ যে নিজেরাও কথা বলতে ভুলে গেছি। যেন আওয়াজ হলেই বিষম কিছু ঘটে যাবে। মানুষ নেই কেন একটাও! কেমন গা ছমছমে নীরবতায় ভারি হয়ে আছে চারিদিক। হঠাৎ দেখি ঐ দূরে পাহাড়ের ওপর থেকে লাল নীল হলুদ সবুজ অজস্র বেলুন বাতাসে ঝাঁপ দিল আর আলতো হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে মাঠের ওপরের আকাশটা ভরে গেল হাজারো বেলুনে। এক এক করে মাঠে নেমে আসছে বেলুনচারী মানুষের দল, বাচ্চা -বুড়ো, নারী – পুরুষ। শুয়ে পড়ছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে, হাসছে, ছুটছে। আমার চোখের পলক পড়ছে না। বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছি। পাঁচ তলার ওপর থেকে নীচে তাকালে আমার মাথা ঘোরে, ঝিমঝিম করে আর এই বাচ্চাগুলো আল্পসের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এভাবে!
রূপকথার ইন্টারলোকেন
GRINDELWALD TERMINAL থেকে গন্ডোলায় চড়ে রওনা দিলাম উঙফ্রাও এর উদ্দেশ্যে।দমবন্ধ করা সুন্দর কারে কয় সেই প্রথম টের পেলাম। পান্নাসবুজ লেকের উপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছি ইওরোপের সর্বোচ্চ রেল স্টেশন ELGER-এর উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে আধঘন্টা ট্রেনে চেপে আমাদের শেষ গন্তব্য উঙফ্রাও। ১৯১২ সালে এই রেলপথ তৈরী শুরু হয় তিন হাজার চারশো চুয়ান্ন মিটার উঁচুতে। উঙফ্রাও সারাবিশ্বে এই CENTENNIAL রেলপথের জন্য বিখ্যাত।UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এই রেলপথ। পিচ্ছিল বরফে ঢাকা খাড়াই পাহাড়ে একটা প্রায় দাঁড়িয়ে থাকা মইয়ের মতো এই রেলপথ তৈরির এই ময়দানবীয় কাজ করতে গিয়ে কতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে আ হত হয়েছে সেই সব নথিভুক্ত হয়ে রয়েছে পাহাড় চূড়ার মিউজিয়ামে। সবার ছবি আর নাম দিয়ে এই মিউজিয়াম। বছরের পর বছর ধরে হাজারো মানুষের কাছে এই রেলপথের ইতিবৃত্তই শুধু তুলে ধরেনি সেই হারানো মানুষদেরও বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন।
উংফ্রাওয়ের রেলপথ আর হেরিটেজ সেই ট্রেন
উঙফ্রাও পৌঁছে ট্রেন থেকে নেমেই লিফটে চড়ে ওপরে এলাম। কি নেই এখানে? রেস্টোরেন্ট, আইসক্রীম পার্লার, চকলেট শপ, স্যুভেনির শপ, স্টুডিও, কফিশপ যেন আল্পসের চূড়ায় আস্ত একটা শপিংমল। কিন্তু শরীর টা কেমন কেমন করছে যেন। মাথা ধরেনি, শ্বাস কষ্ট? তাও না। গা বমি বমি?উহু সেও না। তবে? তবেটাই তো বুঝছি না। চারিদিকে কাচ মোড়া এক বিশাল ঘর তাতে অজস্র সোফা, স্টুলে বসার এলাহী ব্যবস্হা। সেখানে এসে সবাই বসলাম। কাচের বাইরে ধুধু বরফের মরুভূমি। যতোদূর চোখ যায় সাদা বরফের চাদর ঢেউ খেলিয়ে উঠেছে নেমেছে কখনও আকাশ পানে উঠেছে তো অতল খাদে নেমেছে পরমুহুর্তে। আস্তে আস্তে আমার অস্বস্তি কাটছে বুঝতে পারছি। স্বাভাবিক লাগছে শরীর। চৈতীর হাল্কা শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছে। আমার মৃদুভাষী কর্তা মৃদুতম হয়ে গেলেন। বেয়ান বসেই ইশারায় জানান দিলেন আর ঘুরে দেখতে পারবেন না। নীরেনদা ও চৈতীকে নিয়ে চিন্তিত। মোটকথা আমাদের পাঁচজনের মধ্যে আমি ছাড়া সবাই বসে পড়েছে। অতএব একাই অন্যদের সঙ্গে ঘুরতে বেরোলাম। মাইনাস তিন ডিগ্রী তাপমাত্রায় ‘আইস প্যালেস’ দেখতে গেলাম। সরু সুরঙ্গের ভেতরে বরফের রাস্তার দু’ধারে বরফের মূর্তি। সে যে কি অপূর্ব ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। স্টীলের রেলিঙ ধরে পিছল বরফের ওপর দিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগোনো। বরফের গাছে বরফের ফুল। বরফের নৌকোয় বরফের মাঝি। বরফের পার্কে বরফের বেঞ্চে বরফের চার্লি চ্যাপলিন। কোনও রঙ নেই, শুধু সাদা বরফ। কিন্তু একটুও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। মাথার ওপরে বরফ, পায়ের নীচেও বরফ। সবাই সতর্ক, সাবধানী ও ধীরগতি। তার মধ্যেই চলছে ফটো তোলা।আমার মোবাইলে ছবি উঠছে না ভালো। ফ্ল্যাশে ঝলসে উঠছে বরফ আর ছবি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।ইসস যারা বসে রইলা, আসতে পারলো না তারা যে কিছুই দেখতে পেলো না। এই অপরূপ অপার্থিব কে কি করে বোঝাবো ওদের? সঙ্গীহীন একলা দেখায় সুখ নেই। তৃপ্তি নেই অথচ না দেখলেও না। আর কি কখনও আসা হবে এখানে! আইস প্যালেস দেখে বেরিয়ে এলাম বরফের মরুভূমিতে।চারিদিকে অপরিচিত মানুষজন। আমাদের দলের অন্যকাউকেই দেখছি না। অর্ধেক তো আসেই নি। কিন্তু যারা এসেছে তারাই বা সব গেল কোথায়? ফেরার পথে দেখি বরফের থামে হেলান দিয়ে অনন্তরামন আকাশের দিকে মুখ তুলে পোজ দিচ্ছে আর জুলফিকার আলি ওর ছবি তুলছে। মনটা ভালো হয়ে গেল। এই তো অনন্তরামন ছন্দে ফিরছে আস্তে আস্তে। লবিতে দেখি চৈতী শুয়ে আছে আর ওকে ঘিরে রীতেশ আর ওখানকার কর্মীরা ছোটাছুটি করছে। চৈতীর খুব শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে।আঙুলে অক্সিমিটার পরানো,উদ্বিগ্ন নীরেনদা আর সবাই। তাড়াহুড়ো করে চৈতীকে নিচে পাঠানোর ব্যবস্হা হলো। আমরাও সঙ্গে যেতে চাইতেই রীতেশ রীতিমতো ধমকে উঠলো ‘এর আগে ক’বার এসেছ এখানে? আর কখনও আসবে? ওরা নিচে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে নর্মাল হয়ে যাবে। যাও ঘুরতে এসেছ, ঘোরো।’
গন্ডোলা থেকে পান্না সবুজ দ্বীপ
নামার আগে রীতেশ দলের সবাইকে ডেকে ‘উংফ্রাও, টপ অফ ইওরোপ ‘ লেখা দেওয়ালের সামনে ছবি তুলতে নিয়ে গেল। প্রচুর টুরিস্টের ভীড়ে গমগম করছে জায়গাটা। সবাই ছবি তুলবে। রীতিমতো লাইন পরে গেছে কাপল দের ছবি তোলার জন্য। হঠাৎ বাংলা শুনে থমকে গেলাম। ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে দেখি ওমা এতো সুজাতাদির মতো লাগছে না? হ্যাঁ,ঐ তো বাঁ হাতে জরুল! এতো সেই বীরভূমের সুজাতাদিই! বাবার বদলির চাকরির সুবাদে আমরা বছর তিনেক বীরভূমে ছিলাম তখন স্কুলে আমার চেয়ে দু বছরের সিনিয়র ছিলো সুজাতা দি। বহুবছর কোনো যোগাযোগ নেই। কার কাছে যেন শুনেছিলাম ওখানকারই এক কলেজের লেকচারার এর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। বোঝো কান্ড ঐ মফঃস্বলি কলেজের মাষ্টাররাও এখন বৌ নিয়ে সুইজারল্যান্ড ঘুরতে চলে আসছে! হায় ভগবান এরা ইওরোপটাও দীপুদা করে ছেড়ে দিল!
সুজাতা রায়