কে আপন কেই বা পর!

কে আপন কেই বা পর!

সমর্পিতা ঘটক

‘গয়নার বাক্স’ ছবিটা মনে আছে তো সকলের? মারা যাবার পরেও পেতনি পিসিশাশুড়ি পরকীয়া নিয়ে কি উৎসাহীই না ছিলেন! কঙ্কনাকে পদে পদে প্রেরণা যুগিয়ে গেছেন তিনি! আহা আমাদের পিসিমা, মাসিমা কেউ নেই গা ওমন? বেঁচে থেকেও নেই, আর অপরলোকে গিয়েও তাদের কোনো হেলদোল নেই ভাইজি বোনঝিদের প্রেম পিরিতি নিয়ে। ধুস! দূর দেশে থাকা মিনমিনে নাতির কথা সর্বক্ষণ না ভেবে মন ঘোরানোর দাওয়াই নিয়ে হাজির ওই ইন্টুপিন্টু-প্রিয় পিসিমা যখন তখন। তো ওই পিসিমা হল গিয়ে পুকুরঘাটের সইদের মনের ছায়া, অবচেতন আর কি! “শরীর মন জ্বলে খাক হচ্ছে রাখ তোর সতীপনা”, আহা মৌসুমীর ( পর্দায় সেই পিসিমার ভূমিকায়) বলে ওঠা ওই সংলাপ যেন বেদবাক্য! পুকুরঘাটের সইরা ঘটি ঘটি জল খায় আর বুকে বল পায়। পিসিমাই তাদের ইষ্ট আর দুবেলা তার বলা সংলাপ জপে যায়।
তারপর পরপুরুষ আসে। উদাসী চোখের এক শান্ত পথিকের মতো চির-নিবেদিত এক প্রেমিক, একমুখ দাড়ি, কাঁধে ঝোলা, হাতে গোলাপ নিয়ে পিছু নেয় রোজ। রেখে যায় ফুল। “পোড়ারমুখী যে মানুষটা রোজ রাতে আসে পিছু পিছু (আহা! যারা দেখেননি তাদের এখানটা পড়ে ভূতের ছবি মনে হতে পারে, কিন্তু সে দৃশ্যের ব্যঞ্জনা! ওহ!) তাকে আপন করে নে।” মনে ইচ্ছা ষোলোয়ানা, মুখে লাজ সইদের, থুড়ি… সেই ভাইপো-বৌয়ের। স্বামী কতদিন ধরে বিদেশে, সোমত্থ মেয়ে উচাটন মন প্রাণ দেহ নিয়ে আত্মহারা নদীর মতো যেই না ব্যাকুল বেগে আছড়ে পড়বে অমনি পাহাড় হাজির মহম্মদের কাছে। বরপুরুষ বর্ম সমেত বলা কওয়া নেই তল্পিতল্পা নিয়ে হাজির দিকব্দিক জয় করে।
পুকুরঘাটের সইরাও লালালা লালা লালা লা করে স্লোমোশনে ডিম্পল কাপাডয়ার মতো হন্যে হয়ে পরপুরুষের জন্য ছুটছে তো ছুটছেই… কিন্তু আসল মুহূর্তে কেস কেঁচে গন্ডূষ! রাজবধূ ডায়নার জীবন তাদের কাছে আদর্শ, ডেমি মুর, শ্যারন স্টোন দেখে দেখে তারা সলতে পাকিয়ে রেডি। বৈশাখীকে দেখে কিয়দ্বংশ জ্বলে মরে আর বাকিরা মুখ বেঁকিয়ে বলে, অসহ্য। ইয়াস পাড় ভেঙ্গে কত অতলে প্রবেশ করেছে দেখার জন্য নুসরতের ইন্সটাতে ঢুঁ মারে সইরা… গিটারের ছবি, প্রেমের গান, ক্যাপশন, ফুল ফোটার রোমাঞ্চ দেখে শুনে সইদের মন আনচান, দীর্ঘশ্বাস। বুক ফাটা হাহাকার। আগেকার দিনে রানিদের হত হাড়মরমরি রোগ। ওইরকমই এখনও…
পুকুরঘাটের সইদের কেবল মেসেঞ্জারে গোলাপ, ভ্যালেন্টাইনের দিনে গোলাপি হৃদয়, মান্না দের গলায় ইউটিউবের টুকরো, “এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি” কিংবা “ভালবাসার রাজপ্রাসাদে নিশুতি রাত গুমরে কাঁদে” সঙ্গে মোমবাতির ছবি দিয়ে টুকরো কোলাজে পরপুরুষ ভেসে ওঠে… বরপুরষ তখন খাওয়া দাওয়া সেরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে খেতে গুনগুন করে ওঠে “নিভু নিভু আলো যতবার জ্বালো, ঝোড়ো হাওয়া লেগে তার শিখা নিভে যাবে।
সমর্পিতা ঘটক
পুকুরঘাট

পুকুরঘাট

একদিন আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে পুকুরঘাট নামের একটি মেয়েদের ভার্চুয়াল দল খুলে ছিলুম। অচিরেই সে কয়েকটি সদস্যের দল কয়েক হাজার সদস্যের মেয়েদের দল হয় ওঠে। পুকুরঘাট দলের মত এত গুণী মেয়েদের সমাহার বাংলাদেশে খুব কম ভার্চুয়াল দলে আছে। কাজেই সেই দল সেখানেই আটকে থাকবে না বলা বাহুল্য। তাই পুকুরঘাট দলের অন্যতম উদ্যোগ হিসেবে প্রকাশিত হলো পুকুরঘাট পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 thoughts on “কে আপন কেই বা পর!